ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

​দুনিয়ার বুকে জান্নাতি নদী!

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ১৬-১১-২০২৪ ০৩:৩৫:৫৬ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৬-১১-২০২৪ ০৩:৩৫:৫৬ অপরাহ্ন
​দুনিয়ার বুকে জান্নাতি নদী!
নীল, জয়হান, সিহান ও ফোরাত নদী সর্ম্পকে আমাদের কি জানা আছে। জেনে অবাক হবেন যে এই চারটি নদীর উৎস হলো জান্নাত। মানে জান্নাতি নদী থেকে এই চারটি নদী পৃথিবীতে বহমান হয়েছে। 

পৃথিবীতে প্রবাহিত কিছু নদীর সঙ্গে ইসলাম ধর্মের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সহিহ মুসলিমের হাদিসে উল্লেখিত চারটি নদী জান্নাতের সাথে সম্পৃক্ত বলে বর্ণিত হয়েছে। এ নদীগুলো শুধু ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং তাদের ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ইসলামের ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে যেসব চারটি নদী প্রবাহিত, সেগুলি জান্নাতের নদীগুলির অন্তর্ভুক্ত।

নীল নদ (মিশর) 
নীল নদটি সহিহ মুসলিমে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নীল ও ফোরাত জান্নাতের নদীগুলির মধ্যে রয়েছে।’ (মুসলিম ১৬৪) । নীল নদীর ইসলামের ঐতিহ্যের সাথে সবচেয়ে বিখ্যাত সংযোগ হল নবী মুসা (আ.) এর গল্প। তার মা ফেরাউনের আদেশ থেকে তাকে রক্ষা করার আশায় একটি ঝুড়িতে রেখে নীল নদীতে ভাসিয়ে দেন, যা অবশেষে ফেরাউনের পরিবারের কাছে পৌঁছে যায়। মুসার নবী হওয়ার যাত্রা শুরু হয় সেখান থেকেই। মহানবী (সা.) মিরাজে গিয়ে জান্নাতের চারটি নদী দেখেছেন। দুটি বাহ্যিক ও দুটি আভ্যন্তরিক। বাহ্যিক নদী দুটি দুনিয়ায় প্রবহমান, নীল ও ফুরাত। (মুসলিম ১৬৪)

জয়হান নদী (তুরস্ক) 
সহিহ মুসলিমে জয়হান নদীকে জান্নাতের নদীগুলির মধ্যে একটি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে পৃথিবীতে আমরা যে সব উপহার উপভোগ করি তা জান্নাতের অফুরন্ত দানের একটি ক্ষুদ্র ঝলক। এ নদী পূর্ব তারাস পর্বতমালার নুরহাক পর্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে গিয়ে মিশেছে। এটি প্রাচীনকাল থেকে একটি প্রাকৃতিক সীমানা ও বিভিন্ন সভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে পরিচিত ছিল। জয়হান নদীর ডেল্টা এর সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত, যা বিভিন্ন পাখির প্রজাতির আবাসস্থল ও সামুদ্রিক কচ্ছপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাসস্থান সরবরাহ করে। অন্য এক বর্ণনায় আছে, রসুলল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘(শামের) সাইহান ও জাইহান, (ইরাকের) ফুরাত এবং (মিশরের) নীল প্রত্যেক নদীই জান্নাতের নদ-নদীসমূহের অন্যতম। (মুসলিম ২৮৩৯)

সিহান নদী (তুরস্ক)
সিহান নদী, যা সেরাস নামেও পরিচিত, সিলিসিয়া অঞ্চলের দীর্ঘতম নদী। এটি প্রায় ৫৬০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে ভূমধ্যসাগরে মিশেছে। প্রাচীন লেখকরা সিহান নদী সম্পর্কে বিশদভাবে লিখেছেন, এটি ঐ অঞ্চলের সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ নদীটি কৃষি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে গম, ভুট্টা, বার্লি, তুলা, ফল এবং সবজি চাষ করা হয়, যা স্থানীয় অর্থনীতির একটি বড় অংশ।

ফোরাত নদী (ইরাক, সিরিয়া, তুরস্ক)
রসুলুল্লাহ (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এক সময় আসবে যখন ফোরাত নদী সোনার একটি পাহাড় উন্মোচন করবে, এ নিয়ে মানুষ সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। তিনি সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে বলেছেন, ‘ফোরাত নদী সোনার একটি পাহাড় উন্মোচন না করা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না। এ নিয়ে লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হবে, এবং একশ জনের মধ্যে নিরানব্বই জন নিহত হবে। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে কারবালার যুদ্ধে হুসাইন (রা.) এবং তার সঙ্গীদেরকে ইয়াজিদ ইবনে মুআবিয়ার বাহিনী ফোরাত নদীর পানি থেকে বিরত রাখে। উক্ত নদীগুলি জান্নাতের মানে হল, সেগুলির মূল জান্নাতের; যেমন মানুষের মূল হল জান্নাত। অথবা উক্ত নদীগুলির বিশেষ বরকতের জন্য জান্নাতের নদী বলা হয়েছে। আর আল্লাহই ভাল জানেন।

জান্নাতের নদীমালার মধ্যে একটির নাম কাউসার; যা শেষ নবী (সা.)-কে হওজরূপে দান করা হয়েছে। (সুরা কাউসার) এ নদীর মাটি-কাদাও কস্তুরী। (বুখারি) যেখান হতে মহানবী (সা.) তার উম্মতকে কিয়ামতে পানি পান করাবেন। সুর্ববৃহৎ হওজ ও কাউসার নহর (অমৃত নদী) থাকবে জান্নাতী শারাবে পরিপূর্ণ। যে পবিত্র শারাব বা পানীয় দুগ্ধ হতেও সাদা, বরফ হতেও শীতল, মধু হতেও মিষ্ট এবং মিসক চেয়েও সুগন্ধময়। যে একবার সে পানি পান। করবে তাকে আর কোনদিন পিপাসা স্পর্শ করবে না। (বুখারি ৬৫৭৯)

নীল, জয়হান, সিহান ও ফোরাত নদীর গল্প আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, পৃথিবীর সৌন্দর্য ও সম্পদ জান্নাতের অনন্ত দানের একটি ক্ষুদ্র ঝলক। এই নদীগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা ও সচেতনতা আমাদের বিশ্বাসকে আরও মজবুত করতে পারে এবং জান্নাতের প্রতিশ্রুতির প্রতি আমাদের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করতে সাহায্য করে।

বাংলা স্কুপ/ ডেস্ক/ এনআইএন/ এসকে


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ